ট্রাম্পের জেরুসালেম ঘোষণার প্রতি আরব স্বৈরশাসকদের সমর্থন!

ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমের ব্যাপারে তার কর্তৃত্ব প্রকাশ করেছেন। ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যকার সঙ্ঘাতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারী হবে এমন ভণ্ডামি একপাশে সরিয়ে রেখেছেন তিনি। নিরপেক্ষতা বলতে এখন আর কিছু নেই। জেরুসালেমকে ছাড়া কোনো ফিলিস্তিন হতে পারে না। কাজেই এই ইস্যুতে আরেকটি গণ-আন্দোলন শুরু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও জেরুসালেমের মতো শক্তিশালী ইস্যুতে ফাতাহ আন্দোলনের মাহমুদ আব্বাস ও হামাসের ইসমাইল হানিয়া কাছাকাছি আসতে পারেন। একমাত্র জেরুসালেমই পারে সব কারাবন্দী, নির্বাসিত, গাজায় অবরুদ্ধ কিংবা পশ্চিম তীরের নির্যাতিত সব ফিলিস্তিনিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। একমাত্র এই ইস্যুটিই বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমের কাছে আবেদন তৈরি করতে পারে।
ট্রাম্প একা যে এমন বড় একটি সিদ্ধান্ত নেননি তা বোঝাই যায়। তার দেশে ইভানজেলিক খ্রিষ্টান থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটার অনেকের সমর্থন আছে এর প্রতি। তবুও আঞ্চলিক মিত্রদের সমর্থন না পেলেও তার পক্ষে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হতো না। আছে বিদেশীদের সমর্থনও। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় আরব শাসকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। ট্রাম্পের অধীনেই এই অঞ্চলে স্বৈরশাসকদের একটি বলয় গড়ে উঠেছে, যাদের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সা বলতে কিছু নেই।
তারা মনে করে শুধু ফিলিস্তিন নয়, পুরো অঞ্চলের ওপরই তাদের খেয়ালখুশি চাপিয়ে দেওয়ার  অধিকার রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই একটি পুলিশি রাষ্ট্র গড়ে তুলছেন আর পশ্চিমা উদারবাদের ভেক ধরেছেন। ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টিকে এই শাসকেরা সবাই নিরপেক্ষ অংশীদার ও জ্যারেড কুশনারকে তাদের মধ্যে বিচক্ষণ মধ্যস্থতাকারী বলে মনে করেন। চিন্তা, বিবেচনা, সহযোগিতা, পরামর্শ, ঐক্য এই শব্দগুলো তাদের অভিধানে নেই। সেখানে গণতন্ত্র অচল।
বাকস্বাধীনতা বলতেও কিছু নেই। এ কারণেই সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে মাহমুদ আব্বাসকে শাসাতেও  পারেন। হুমকিতে কাজ না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আব্বাসকে তিনি অর্থের প্রলোভনও দেখিয়েছেন বলে অনেক সূত্র অনুযায়ী খবর।
ট্রাম্পের সমর্থনকারী স্বৈর বলয়ে আছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইনের শাসকেরা। মোহাম্মদ বিন সালমান, মোহাম্মদ বিন জায়েদ, আবদুল ফাতাহ আল সিসির সবাই ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কোনোটিই ঘটেনি। যেমন কাতারের ওপর অবরোধ, সাদ হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করা, জিসিসি ভেঙে দিয়ে বিকল্প জোট গঠন করা প্রভৃতি।
সংস্কারের নামে ট্রাম্প সৌদি রাষ্ট্রের স্তম্ভ ভেঙে দেয়া, নিকটস্থ আত্মীয়দের থেকে সম্পদ কেড়ে নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন  বিন সালমানকে। বিনিময়ে তারা ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা, কিংবা মুসলিমবিরোধী টুইটও মেনে নিয়েছেন। বিন সালমানের সুর একই সাথে প্রতিফলিত হয়েছে সৌদি আরবের লেখক, সাংবাদিকদের মধ্যেও। তারাও ফিলিস্তিনকে বাদ দিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সৌদি সাহিত্যিক তুর্কি আল হামাদ। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন এখন আর আরবদের প্রধান ইস্যু হতে পারে না। কারণ এর অধিবাসীরাই ফিলিস্তিনকে বিক্রি করে দিয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক হামজা মুহাম্মদ টুইটারে লিখেছেন, একবার শান্তি স্থাপিত হলে ইসরাইল হবে সৌদি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
এই গ্রুপটি যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তার ঠিক বিপরীত অবস্থান নিয়েছে মার্কিন মিত্রদেরই আরেকটি গ্রুপ। যারা ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে নিজেদের ভুক্তভোগী মনে করেন। জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রকে এর পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার যে ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক, তাতে যোগ দিয়েছে জর্দান।


Source-Daily Nayadigonto
Share on Google Plus Share on Whatsapp



0 comments:

Post a Comment