স্নেহাশিষ মুখার্জি :নদীয়া জেলার শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ীর খ্যাতি সর্বজনবিদিত |ভারতের বাজার এমনকী বিশ্ব বাজারেও শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ীর কদর রয়েছে |কিন্তু এই তাঁতের শাড়ী যারা তৈরি করেন সেই তাঁতিদেরই ভারত কেন বিশ্ববাজারে কোন দাম নেই |তাঁতিরা তাঁত বুনে শাড়ী তৈরি করেন এবং সেই শাড়ী স্থানীয় মহাজনের কাছে বিক্রি করেন পরিবর্তে সামান্য কিছু মজুরি তাঁতিরা পারিশ্রমিক হিসেবে পায় যা তাদের জীবনধারনের জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয় |
এতদসত্ত্বেও তাঁতিরা তাদের জীবিকার মান বাঁচিয়ে রেখেছিলো |কিন্তু বর্তমানে হাতে বোনা তাঁতের বদলে বাজারে এসেছে 'পাওয়ারলুম 'নামক তাঁতের শাড়ী তৈরির যন্ত্র যা হাতে বোনা তাঁতের থেকে অনেক দ্রুত এবং কম সময়ে শাড়ী তৈরি করতে সক্ষম |হাতে বোনা তাঁত একদিনে একটি শাড়ী তৈরি করতে পারে কিন্তু পাওয়ারলুম একের অধিক শাড়ী তৈরি করতে পারে |যার ফলে হাতে বোনা তাঁত বাজার থেকে ক্রমশ অবলুপ্ত হতে শুরু করেছে ,তার জায়গায় স্থান পেয়েছে পাওয়ারলুম যন্ত্র |
তাঁতিদের অবস্থা ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে |তাদের তৈরি হাতে বোনা শাড়ী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে |একদিকে মহাজনদের দেওয়া কম মজুরি অন্যদিকে পাওয়ারলুমের ক্রমবর্ধমানতা তাঁতিদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপ হতে শুরু করেছে |এমতবস্থায় শান্তিপুরের বিধায়ক শ্রী অরিন্দম ভট্টাচার্য তাঁতিদের এহেন দুঃসহনীও অবস্থা পর্যবেক্ষন করেন এবং তাদের নিজের হাতে তৈরি শাড়ী যাতে বিশ্ব বাজার স্থান পায় তার জন্য শান্তিপুরে অবস্থিত "গীতা প্যালেস " এ একটি কর্মশালার আয়োজন করেন |
এই কর্মশালায় অরিন্দমবাবুর উদেশ্য ছিল শান্তিপুরের তাঁত শিল্পকে বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেওয়া |যে ক্ষেত্রে অরিন্দমবাবু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন যেগুলি হল শ্যাপেলিং করা ,ব্রোশার তৈরি করা |অরিন্দমবাবুর উপস্থিতিতে কর্মশালায় এসেছিলেন ইন্ডিয়ান স্টেট প্রমোশন অর্গানাইজেশন এর রিপ্রেজেনটেটিভ ধ্রুব দাশমুন্সি এবং একজন কানাডিয়ান বায়ার প্রমীলা জনসন |এই কর্মশালায় বিভিন্ন ধরনের হাতে তৈরি তাঁতের শাড়ী ছিল ,কিছু তাঁতির হাতে তৈরি নকশা করা শাড়ী ছিল |যাঁরা শান্তিপুরে বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কাছ থেকে তাঁতের শাড়ীর কিছু নমুনা নেন এবং কিছু অর্ডার পাশ করেন |১৭ জন তাঁতি তাঁদের তৈরি শাড়ীর কিছু শর্টলিস্ট করা হয়েছে |
অরিন্দমবাবু বলেন যখন তিনি লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স এ গিয়েছিলেন সেখানে কিছু প্রোডাক্ট এপ্রুভফ হয়েছিল এক্সপোর্ট কোয়ালিটি হিসেবে |সেই প্রোডাক্ট গুলোই আবার ধ্রুব দাশমুন্সি এবং প্রমীলা জনসনকে দেখানো হয় |যেখানে কানাডার থেকে বেশ কিছু শাড়ী শর্টলিস্ট করা হয় যাতে শান্তিপুর এর শাড়ী বিশ্ব বাজারে উন্মুক্ত হতে পারে |
অরিন্দমবাবু এও জানান পরবর্তী কালে তাঁতিদের নিয়ে তিনি আরও কর্মশালার আয়োজন করবেন যেখানে উদেশ্য হবে শান্তিপুরে এর তাঁতিদের সাথে কানাডিয়ান বায়ারদের সরাসরি সাক্ষাৎ |যার ই প্রথম পর্ব সূচিত হল অরিন্দমবাবুর নেতৃত্বে |যার পরিপেক্ষিতে তাঁতির রা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুরক্ষিত করতে পারবে এবং শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ী তাঁতির রা সরাসরি বিশ্ব বাজারে বিক্রি করতে পারবে |তবে এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হয় সেটাই দেখার ....
0 comments:
Post a Comment