সঞ্চিতা সিনহা: বর্তমান যুগে করোনার আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী মানুষ। সামাজিক সচেতনতার জন্য তাই জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।এই জনসমাগম এড়ানোর জন্যই গত মার্চ মাস থেকে সরকার চালু করেছে লকডাউন। যার দরুন সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষজন। লকডাউন এর জন্য তারা কোথাও কোনো কাজ করতে যেতে পারছে না। চক্ষু লজ্জার ভয়ে তারা আবার কারোও কাছে হাত পাততে ও পারছেনা। আর এইসব অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কলকাতার জিমখানা টেনিস ক্লাবটি। এই ক্লাবটির পক্ষ থেকে টেনিস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও তারা যুক্ত থাকে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে দরিদ্র মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে সেজন্য কলকাতা পুলিশের উদ্ধর্তন কর্তাদের সহযোগে স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এই ক্লাব কতৃপক্ষ।
আর অর্থনৈতিকভাবে সরাসরি ক্লাবকে কোন সাহায্য করতে না পারলেও এই সময়ে বিনা পারিশ্রমিকে দুস্থদের জন্য সুস্বাদু রান্না করে দিতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় মোহাম্মদ দাউদ ও তার দুই সহকর্মী। যারা কোভিড ১৯ মারণ রোগের প্রাদুর্ভাবের আগে শহরেরই এক নামজাদা হোটেলে বিরিয়ানি, কাবাবের মতো সুস্বাদু রান্নার কাজে যুক্ত ছিলেন!
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অমিয় ভট্টাচার্য্য এবিষয়ে জানিয়েছেন যে, কলকাতা পুলিশের একান্ত সহায়তা না পেলে তারা এই দুর্দিনে দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারতেন না। কলকাতা পুলিশ ক্লাবের পাশে সর্বদা আছে এবং সমর্থন করেচলেছে বলেই গরিব ভবঘুরে ফুটপাতবাসীদের মুখে তারা আহার তুলে দিতে সক্ষম হচ্ছেন। জাভেদ শামীম, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডি পি সিং,কলকাতার অ্যাডিশ্যানাল পুলিশ কমিশনার, রুপেশ কুমারও এই কর্মকান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত। তাই বেনিয়াপুকুর, ভবানীপুর, বেলেঘাটা থানা এবং পূর্ব ট্রাফিক গার্ড সহ স্থানীয় পুলিশ স্টেশন গুলির পুলিশেরা নিয়মিতভাবে কমপক্ষে ৫০০টি খাবারের প্যাকেট সংগ্রহ করে পার্কসার্কাস অঞ্চল ও তার আশেপাশের জায়গায় গরিব মানুষদের মধ্যে তা বিতরণ করছেন।
ক্লাবের কোষাধক্ষ্য প্রমোদ আগরওয়াল জানিয়েছেন যে, ২ রা এপ্রিল থেকে তাঁরা খাবার বিতরণ করা শুরু করেছেন এবং এযাবৎকাল ধরে প্রায় ২০০০০ থেকে ২২০০০ মতো খাবারের প্যাকেট তারা বিতরণ করেছেন।
ডিসিপি কলকাতা ট্রাফিক আইপিএস রুপেশ কুমার জানিয়েছেন যে, হরিজন বস্তি ও অন্যান্য অঞ্চলের গরিব মানুষদের সাহায্য করার জন্য ক্লাবটি লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই এগিয়ে এসেছে। কলকাতার এই ক্লাবটি গরিব মানুষদের জন্য ভালোই কাজ করছে।
গরিব মানুষদের মুখে আহার তুলে দেওয়ার পাশাপাশি এই ক্লাবটি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেও এক লক্ষ টাকা দান করেছে।আবার এইদিনই রান্নার খাদ্য বিতরণের পাশাপাশি ক্লাবের পক্ষ থেকে পার্কসার্কাস ও তার আশেপাশের অঞ্চলের ১২৫ জন অভাবী মানুষদের মধ্যে হরলিক্স,জুস,চকলেট চাল, ডাল,আলু,পেঁয়াজ তেল-মশলা ও নিত্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর খাদ্যবস্তু বিতরণ করেছে।
ক্লাব সিদ্ধান্ত নিয়েছে লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই কাজটি চালিয়ে যাবে। ক্লাবের এই উদ্যোগটি যেমন প্রশংসনীয় ঠিক তেমনি কলকাতা পুলিশের সমর্থন ও যথেষ্ট প্রশংসনীয়।
0 comments:
Post a Comment