প্রবীর পাঞ্জা: মুখে মোদি সরকারের আর্থিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আম্বেদকর মুর্তির সামনে ধর্নাকে কংগ্রেস,বাম ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, নিয়োগ-দূর্নীতি থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে জাতীয় রাজনীতির নামে লাইমলাইটে আসার মরিয়া রাজনৈতিক বাজি বলেই মনে করছেন। নানা ভাবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যাতে দেশে মোদী বিরোধী ও বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে উঠতে না পারে সেজন্যই মমতা তৎপর বলেই মনে করছেন জাতীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের বড় অংশ। মমতার লক্ষ্য অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি,কে সি আরের বিআরএস,কেজরিওয়ালের আপের বাইরে নীতিশ কুমার-লালুর সংযুক্ত জনতা দল,রাষ্ট্রীয় জনতা দল,শারদ পাওয়ারের এনসিসি কেও টেনে আনা।এর পাশে আবার বিজেপি বন্ধুপ্রতিম দল বিজু জনতা দল,জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস,ছাড়াও দেবগৌড়ার সেকুলার জনতা দলকে কাছে টেনে রাষ্ট্রীয়স্তরে অ-কংগ্রেসী তৃতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনে সক্রিয় হওয়া। মমতা নিজে মোদীর বিকল্প মুখ হতে চাইলেও,পশ্চিমবঙ্গে নানা দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পর জাতীয় রাজনীতিতে যে,মমতার টিআরপি কোথাও যেন দিনে দিনে কমেছে তা একান্তে কুবল করেছেন বহু বিরোধী দলের নেতারা সহ রাজনৈতিক ওয়াকিবহালরা। মমতার মত নীতিশ কুমার,কে চন্দ্রশেখর রাও,অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রত্যেকেই আবার নিজের জায়গা থেকে ভিতরে ভিতরে মোদী বিরোধী বিকল্প প্রধানমন্ত্রীর মুখ হতে চাইছেন। ফলে মমতা যে অভিন্ন বিরোধী নেত্রী হতে পারছেন না তা নিয়ে নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল।
মোদী-শাহদের পরিপক্ক রাজনৈতিক কৌশল হলো কংগ্রেসের নেতৃত্ব মেনে যাতে বামপন্থী ও আঞ্চলিক বিজেপি বিরোধী দলগুলি কোনভাবেই বৃহত্তর জোট করতে না পারে তা নিশ্চিত করা। আর এইভাবে আঞ্চলিক দলগুলি ফেডারেল ফ্রন্ট বা তৃতীয় রাজনৈতিক ফ্রন্ট যে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি ও ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীকে সাহায্য করবে তা মানছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাই মমতা, কেজরি,কেসিআর-রা কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় জোটের যে তত্ত্ব সামনে আনছেন তাতে স্বাভাবিকভাবেই পরম সস্তিতে বিজেপির রাজনৈতিক অপারেটররা।কর্ণাটকে দেবগৌড়ার দল ও কংগ্রেসের জোট সম্ভাবনা ব্যর্থ হওয়ার কর্ণাটকে আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে মোদী-শাহ- নাড্ডারা। কংগ্রেসের অন্দরে আশঙ্কা যে, বেশ কিছু আঞ্চলিক দলের নেতা-নেত্রীদের আর্থিক স্ক্যামের তদন্তের নামে আগ বাড়িয়ে চলেছে নানা কেন্দ্রীয় এজেন্সি।এর ফলে রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেলিং-এর সুযোগ পেয়ে মোদী-অমিত শাহের বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য যে কংগ্রেসের নেতৃত্বে কোনভাবেই জাতীয়স্তরে কোন বিকল্প মজবুত রাজনৈতিক জোট গড়ে উঠতে না পারে।
আর এইভাবে,জাতীয়স্তরে কংগ্রেসের শক্তিবৃদ্ধি না হয় যে জন্য রাজ্যে রাজ্যে পাল্টা কৌশল নিতে চাইছে বিজেপি। মমতার আপাতত কেন্দ্র বিরোধী ধর্ণা ও জাতীয় রাজনীতিতে লাইম লাইটে আসার চেষ্টার পিছনে গেরুয়া শিবিরের প্রবল ভাবে কৌশল কাজ করছে বলে সন্দেহ কংগ্রেস নেতৃত্বের।
0 comments:
Post a Comment