Indiapost24 Web Desk:দক্ষিণ কলকাতার সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট অন্যান্য অনেক এলাকার থেকে আলাদা। দক্ষিণ কলকাতার রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্টত যে, রাজনৈতিক দিক থেকে সবসময়ই ডানপন্থী বা দক্ষিণপন্থী ঘরানার। এখানে আগে দীর্ঘদিন ধরে জিতে এসেছে কংগ্রেস। তবে তৃণমূল দলটি তৈরি হবার পর থেকে তা তাদেরই অধীনে চলে যায়। যার জন্য এখানের দীর্ঘদিনের (দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র) সাংসদ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে সাংসদ মালা রায়-বিধায়ক দেবাশিস কুমার।
বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতায় যখন গোটা দেশজুড়ে রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছিল তখন কলকাতার ফুসফুস এলাকায় তেমন কিছু দেখা গেল না। এমনকী এখানের অবাঙালি পরিবারগুলিও নিজেদের কাজে ব্যস্ত। বেশ কয়েকটি পরিবার টিভিতে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান দেখলেও কেউ রাস্তায় নেমে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেননি।বরং ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানানোর যথাযথ ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যম থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া করানোর ব্যবস্থা করা হয়।রামমন্দির বা রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে তেমন কোনও উন্মাদনা দেখা যায়নি। হাতেগোনা কয়েকজন বিজেপি কর্মী-সমর্থক কাঁধে ঝান্ডা নিয়ে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে হেঁটে গেলেও তার কোন ছাপ পড়েনি সাধারণ মানুষের উপর।
অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড় দিয়েই শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংহতি মিছিল।উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাজ্যের রাজ্যের সব হেভি ওয়েট নেতা-মন্ত্রীরা। হাজরা মোড় থেকে শুরু করে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত জনসমুদ্র পরিণত হয় এই মিছিল।
এদিন,তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিয়ে পথে নামেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুদ্বার,গির্জা, মসজিদ ঘুরে পার্কসার্কাস মোড়ে শেষ হয় মিছিল। আসলে ধর্ম আর রাজনীতি যেন মিলে না যায়, ধর্মকে ঢাল করে রাজনীতি করলে হিংসা বাড়বে। তাই ধর্ম যার যার উত্সব সবার এই কথা শোনা যায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার গলায়।সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়!আর ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। আসলে এটাই তো দেশের আসল ছবি।
সভামঞ্চ থেকে বার্তা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়,'আমরা ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করি না। তৃণমূল সরকার ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমার কোনও ধর্ম নেই। আমার একটাই ধর্ম মানব ধর্ম। মানুষকে পরিষেবা দেওয়াই আমার কাজ। যাকে ইচ্ছে ভোট দেবেন। কিন্তু ধর্মের নামে নয়, কর্মের নামে ভোট দিতে হবে।' পার্কসার্কাস মোড়ে বক্তব্যের মাঝে মসজিদ থেকে আজানের সুর শুনে বক্তব্য থামিয়ে দেন অভিষেক। তার পর
তিনি বলেন, 'আমরা দুর্গাপুজোর সময় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আনন্দ করি। তেমনই ঈদের সময়ও আনন্দ করি। রমজানে যদি রাম থাকে আর দিওয়ালিতে যদি আলি থাকে, তাহলে কেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এক হয়ে থাকতে পারবে না? আমার ধর্ম আমায় বিভাজন শেখায়নি। সবাই মিলে এক হয়ে থাকতে শিখিয়েছে। কেউ বলছেন, হিন্দুরা বিপদে। কেউ বলছেন, মুসলমানরা বিপদে। আমি বলছি, ধর্মের চশমাটা খুলে দেখুন, গোটা হিন্দুস্তানই বিপদে রয়েছে'।আর এইভাবে তাই অযোধ্যার বিগ ইভেন্ট বা দক্ষিণ কলকাতার পাশাপাশি বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কোন রকম ভাবেই ছাপ ফেলতে পারেনি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
0 comments:
Post a Comment