সন্দেশখালি ইস্যু আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের অস্ত্র নাকি ধর্মীয় বিভাজনের অস্ত্রে শান?

 



Indiapost24 Web Desk:নোনা জল বেষ্টিত দ্বীপাঞ্চল সন্দেশখালি এখন খবরের শিরোণামে। সব রাজনৈতিক দল দলে দলে পাশে দাঁড়াতে চাইছেন সন্দেশখালির মানুষের পাশে ।শুভেন্দু অধিকারী সুকান্ত মজুমদার অধীর চৌধুরী সন্দেশখালিতে যাওয়ার চেষ্টা করেও প্রশাসন তাদের আটকে দিয়েছে।বিরোধীদের আটকাতে মরীয়া প্রশাসন।অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে মিলেছে ছাড়পত্র। শুভেন্দু অধিকারী থেকে বৃন্দা করাত সহ বিভিন্ন বিরোধী নেতাদের সন্দেশখালি যাওয়ার আর কোনো বাধা নেই। বিরোধী সব রাজনৈতিক দল শাসকদলের বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটের আগে এটাকেই প্রধান হাতিয়ার হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে।মরীয়া বিজেপি একেবারে    আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে।এমনকি আদিবাসী ও  মুসলমানদের বিভাজনের চেষ্ঠা চালিয়ে যাওয়া কসুর করছে না। বিশেষ করে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সরাসরি এই বিভাজনের অস্ত্রে শান দিতে চাইছেন বার বার। এদিকে জাতীয় আদিবাসী কমিশনের 

চেয়ারম্যান অরুন হালদার সন্দেশখালি পরিদর্শনের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবী জানিয়েছেন। একই দাবী জানিয়েছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। অন্যদিকে জাতীয় শিশু কমিশনের প্রতিনিধিরাও সন্দেশখালি পরিদর্শনের পর জানিয়ে দিয়েছে এখানকার শিশুরাও হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে। সব তীর স্থানীয় শাসক তৃণমূলের নেতাদের দিকে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের দুই নেতা উওম ও শিবু পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। জোর করে জমি দখলের অভিযোগ, মহিলাদের ধর্ষণ শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। শাসক তৃণমূল ও হারানো জমি কিছুটা ফেরানোর আশায় অবশেষে সন্দেশখালি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে।দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রূতি দেওয়া হচ্ছে। আবার এসবের মাঝে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মুখে বার বার উঠে এসেছে সন্দেশখালিতে তৃণমূলের অত্যাচেরর কথা। এরই মাঝে ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসছেন বারাসতে সভা করতে। অব্যশম্ভাবী তাঁর বক্তব্যে উঠে আসবে সন্দেশখালি। সব মিলিয়ে রাজ্য থেকে জাতীয় রাজনীতিতে সন্দেশখালি এখন প্রধান চর্চার বিষয়।



লোকসভা নির্বাচনের আগে সন্দেশখালিতে উদ্দেশ্যপ্ৰণোদিত অশান্তির অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজধর্ম পালনেও কঠোর বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এপ্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বিধানসভাতেও মুখ খুলেছেন। তিনি সাফ জানিয়েছেন, বিজেপি তথা আরএসএস সন্দেশখালিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গোলমাল পাকাতে চাইছে। সন্দেশখালিতে অশান্তি তৈরির জন্য বহিরাগতদের কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। 

মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে এও অভিযোগ করেছেন, সন্দেশখালিতে আরএসএস সক্রিয়। আরএসএস এলাকার বাসিন্দা আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে গোলমাল পাকাচ্ছে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ছাড়াও সন্দেশখালি ইস্যুতে কংগ্রেস, সিপিএম একযোগে আসরে নেমে পড়েছে।

বিধানসভায় মুখ খোলার তিনদিনের মাথায় রবিবার ফের সন্দেশখালির অশান্তি নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মমতা বীরভূমে সভা করতে গিয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলেছেন, তা বিচার্য। 

মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিজেপি তথা অন্য বিরোধী দলগুলো সন্দেশখালির মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেও এপর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দা কোনও মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে এফআইআর দায়ের করেননি।

ফলে প্রশ্ন উঠছে, কেবল মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দেশখালিকে ইস্যু বানিয়ে অশান্তি পাকানো আদৌ যুক্তিসঙ্গত কিনা। 

এদিন বীরভূমের ওই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কঠোর রাজকর্ম পালনের বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে'। আদতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের জমিবাড়ি দখল হয়ে থাকলে তা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এবিষয়ে বিজেপি-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবার কী যুক্তি দর্শাবে, এরই অপেক্ষায় বাংলার মানুষ। তবে বিরোধীরা লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার শান্তি-সুস্থিতি রক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর এই আবেদনে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই কর্ণপাত করবেন না, এও স্পষ্ট। 

এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, সন্দেশখালির ঘটনার সত্যাসত্য বিচারের পরিবর্তে বিজেপি-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো উত্তেজনা ছড়াতে সক্রিয়। কার্যত সন্দেশখালিকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে বিরোধী শিবির। 

শনিবার থেকে দিল্লিতে শুরু হওয়া বিজেপির রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে কোনও প্রামাণ্য তথ্য পেশ না করেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাতাবরণ উত্তপ্ত করেছেন। শাহর দাবি, 'সন্দেশখালির ঘটনা মানবজাতির লজ্জা'। এধরনের মর্মান্তিক ঘটনা এর আগে স্বাধীন ভারতে কখনও ঘটেনি।

দেশের বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা কেন বাড়ছে, এবিষয়ে অবশ্য একটি শব্দও খরচ করেননি শাহ।

এরপরও বিরোধীরা সন্দেশখালি ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতির বাতাবরণ যেভাবে উত্তপ্ত করে তুলছে, এবিষয়ে এদিন বীরভূমে সিউড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'ইডিকে কাজে লাগিয়ে এবং আরও নানা অছিলায় বিজেপি সন্দেশখালিতে তিলকে তাল করছে'।

এখন ভোট মিটে গেল সন্দেশখালির মানুষের কি হবে। মানুষে মানুষে যে অবিশ্বাসের বাতাবরন তৈরি করা হচ্ছে আগামী দিনে তার চড়া মাসুল দিতে হবে না তো সন্দেশখালির খেটে খাওয়া গরিব মানুষ গুলোকে। এ প্রশ্ন উঠছে বার বার। সময়ই তার উত্তর দেবে।

Share on Google Plus Share on Whatsapp



0 comments:

Post a Comment