মানবাধিকার ও আজকের পশ্চিমবঙ্গ





মানবাধিকার ও আজকের পশ্চিমবঙ্গ

রাকেশ দাশ

পশ্চিমবঙ্গের বিগত কয়েক বছরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্রিয়াকলাপ লক্ষ্য করলে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে গণতান্ত্রিক অধিকার, সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার, সামাজিক সুরক্ষা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা প্রভৃতি শব্দগুলি এই রাজ্যে অলীক কল্পনায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের নির্লজ্জ জেহাদী তোষণ ও চরম দুর্নীতির সাঁড়াশির চাপে ওষ্ঠাগতপ্রাণ জনতাকে সকাল সন্ধ্যা ছেলে ভুলানো গান শুনাতে ব্যস্ত গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের মেরুদণ্ডহীন  বৃহত্তর অংশ। এদিকে বাদুড়িয়া থেকে রায়গঞ্জে জেহাদীদের নারা-এ-তকদীরের প্রবল আস্ফালনের আওয়াজকে চাপা দেওয়ার জন্য হেগে কন্যাশ্রীর স্বীকৃতির জমজমাট আস্ফালনে ব্যস্ত দায়িত্বজ্ঞানশূন্য প্রশাসন।
এরই মধ্যে সমাজ জাগরণের কাজে নিয়োজিতপ্রাণ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন, অসাধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং মনুষ্যত্বহীন, নররাক্ষস জেহাদীদের ত্রিমুখী আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিঃশব্দে সামাজিক জাগরণের কাজে নিরত। এমনই একটি সামাজিক সংগঠনের গোসাবা এলাকার সদস্যদের উপরে প্রচণ্ড ত্রিমুখী আক্রমণ নেমে এসেছে।
গত ৯ জুলাই, ২০১৭ রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকের পাঠানখালি পঞ্চায়েত এলাকার বটতলি এলাকায় উক্ত সংগঠনের বার্ষিক গুরুপূজন উৎসব পালিত হয়। জনৈক তফসিলি উপজাতি ভুক্ত কার্যকর্তার বাড়িতে জেলার কার্যকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রায় ২৫ জন কার্যক্রমে উপস্থিত ছিল। তাদের অধিকাংশই বালক ও কিশোর। সন্ধ্যা ছয়টার সময় কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর পরই প্রায় ৩০ জন দুষ্কৃতীর একটি দল লোহার রড, বাঁশ, শাবল প্রভৃতি নিয়ে উৎসবের স্থানে চড়াও হয়। আক্রমণকারীরা সকলেই একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত এবং ঘটনাচক্রে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের আশ্রিত। ঘটনাস্থলের মাত্র ২০০-৩০০ মিটার দূরেই পুলিশ ফাঁড়ি। দুষ্কৃতীরা উপস্থিত কার্যকর্তাদের প্রচণ্ড মারার পর ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশ কর্মীদের উপস্থিতিতেই তাদেরকে আবার মারধর করা হয়। তাদের মোবাইল ফোন, এটিএম কার্ড, গুরুপূর্ণিমায় সমর্পিত অর্থরাশি সমস্ত কিছু কেড়ে নেওয়া হয়। এই সময় একজন কার্যকর্তা কোনক্রমে পালিয়ে নিকটবর্তী একটি বাড়ির বাগানে স্থিত শৌচালয়ে লুকিয়ে পড়ে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে প্রহৃত কার্যকর্তারা সকলেই তফসিলি জাতিভুক্ত।
এর পর সাড়ে ছয়টা নাগাদ শাসক দলের স্থানীয় নেতা গৌতম সর্দার এবং পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দেবাশিষ নস্করের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন দুষ্কৃতীর আরেকটি দল পূর্বোক্ত তফসিলি উপজাতি ভুক্ত কার্যকর্তার বাড়ি আক্রমণ করে যেখানে কার্যক্রমটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরিবারের সকলের শারীরিক নিগ্রহ ও অবাধ লুটপাট করা হয়। রাত্রি আটটা নাগাদ এস.আই বিপ্লব ঘোষ একটি বেআইনি বন্দুক এনে গোসাবা থানার ওসির নিকট মিথ্যা রিপোর্ট করে যে সেই বন্দুকটি প্রহৃত কার্যকর্তাদের মধ্যে একজনের নিকট পাওয়া গিয়েছে। এর পর তাকে গোসাবা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ততক্ষণে দুষ্কৃতীদের খপ্পর থেকে পালিয়ে যাওয়া পূর্বোক্ত কার্যকর্তার নেতৃত্বে প্রায় ১০০-১৫০ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন স্থানীয় মানুষ থানায় উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে প্রহৃত ও রক্তাক্ত অন্য দুইজন কার্যকর্তাকে মেডিকেল চেক-আপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরেও তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে তাদেরকে লক আপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা থানা ঘেরাও করার পরে প্রবল জনরোষের মুখে পড়ে ওসি জানায় যে সেই কার্যকর্তাদের বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ আনা হয়েছে সেজন্য তাদেরকে তৎক্ষণাৎ ছাড়া যাবে না।
এর পর বহু আইনজীবীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পরের দিন শোচনীয় অসুস্থ দুইজন কার্যকর্তাকে জামিন দেওয়া হয়। তারা এখনও সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় বাঙ্গুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনার গতি প্রকৃতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে রাজ্যে রাজনৈতিক দুষ্কৃতী, অসামাজিক জেহাদী তত্ত্ব এবং দুর্নীতিতে আদ্যোপান্ত নিমজ্জিত প্রশাসন কীভাবে আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে। সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার।
স্বাভাবিক ভাবেই সুদূর গাজায় সন্ত্রাসী জেহাদীদের মৃত্যুতে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনকারী ও মহম্মদ আখলাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তার মোড়ে গোস্ত ভক্ষণকারী দুর্বুদ্ধিজীবীরা এখন গণমাধ্যমে বিশ্লেষণ করছেন–কীভাবে সুদূর উজ্জয়িনীতে কোন ব্যক্তি নিজের মায়ের সঙ্গে মন্দিরে তোলা ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোষ্ট করে বাদুড়িয়াতে অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জেহাদী সন্ত্রাসীদের উত্তেজিত করে পশ্চিমবঙ্গকে উত্তাল করার ষড়যন্ত্র করছেন।
আজ আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা জেহাদী বিচ্ছিন্নতাবাদী ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে প্রত্যক্ষত এবং ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে ভারতবর্ষের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমিকতার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এই কাজে পরোক্ষে মদত যোগাচ্ছে অর্থগৃধ্নু, দায়িত্বজ্ঞানহীন গণমাধ্যমের বৃহত্তর অংশ।
আমরা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি প্রশাসনের নির্লজ্জ নোংরামি, রাজনৈতিক নেতাদের ন্যক্কারজনক লাম্পট্য, বিচ্ছিন্নতাকামী জেহাদী শক্তির ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ এবং গণমাধ্যমের মেরুদণ্ডহীনতার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে। আমরা হাতে হাত রেখে মিলে একসাথে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বীর সুভাষের জন্মভূমি এই পশ্চিমবঙ্গকে বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশকারী দেশবিরোধী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করি। আগামী নবজাতকের জন্য আমাদের পশ্চিমবঙ্গকে একটি সুরক্ষিত, সুন্দর রাজ্যে রূপান্তরিত করি।


রাকেশ দাশ
মতামত লেখকের নিজস্ব ।হিন্দু লাইভের নয়।
Share on Google Plus Share on Whatsapp



0 comments:

Post a Comment