তেহরান-ওয়াশিংটন দ্বন্দ্বে শক্তিধর দেশগুলোর কী অবস্থান?

জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ অবস্থানে খুশি হতে পারেনি। তবে ইরান চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে আসার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব ও ইসরাইল। তার এই  ইরানবিরোধী বক্তব্যের প্রশংসা করেছে ইসরাইল।

 বৈদেশিক নীতিতে নিকটতম মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রকে বেশ কড়াভাবে সতর্ক করেছে জার্মানি ও ফ্রান্স। তারা বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়া প্রতিরোধের এই চুক্তির কোনো দুর্বলতা সৃষ্টি হলে ব্যাপকভাবে শান্তি বিঘ্নিত হবে।
বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো যৌথ বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করি ইরানের পরমাণু চুক্তির ভিত্তি দুর্বল করে দেওয়া, চুক্তি অনুযায়ী দেশটির ওপর থেকে প্রত্যাহার করা নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করার আগে মার্কিন প্রশাসন এবং দেশটির কংগ্রেস যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের নিরাপত্তায় এর সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনা করবে।’ চুক্তির প্রতি যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের অঙ্গীকার অব্যাহত রাখার ঘোষণা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তিতে থাকার জন্য তাদের আহ্বানকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ট্রাম্প।

রাশিয়া ট্রাম্পের সমালোচনা করে জানায়, চুক্তি অক্ষত থাকবে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে হুমকি ধমকি এবং আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বরের কোনো স্থান নেই। 
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তে ইউরোপীয়রা উদ্বিগ্ন এবং এর ফলে ইরানের সাথে আমাদের আবার সামরিক সংঘাতে ফিরে যেতে হতে পারে। এ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের চীন ও রাশিয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

 জার্মানির চ্যান্সেলর, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের ভাবনার সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইরানের পারমানবিক চুক্তির স্বীকৃতি না দেয়ার ঘোষণা মানান সই নয়। আমরা আশা করি মাকিন কংগ্রেস এই চুক্তিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিবে না।’  হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা ইস্যুতে ট্রাম্প আমেরিকাকে ছোট ও বোকা বানিয়েছেন। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ ইরানকে ভালো অবস্থানে চলে যেতে সহায়তা করেছে। কারণ ইরান পরমাণু সমঝোতা মেনে চলছে না বলে ট্রাম্প যে কথা বলছেন তার পক্ষে তিনি কোনো যুক্তি তুলে ধরতে পারেন নি। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বড় রকমের ভুল এবং ওয়াশিংটনকে অনেকের কাছেই অবিশ্বস্ত করে ফেলেছে। এ কারণে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ভবিষ্যতে চুক্তি করা কঠিন হবে।’

জাতিসংঘে নিযুক্ত অস্ট্রিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি জেন কিকার্ট বলেছেন, ‘ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে গেলেও এটি অব্যাহত থাকবে। পরমাণু সমঝোতা থেকে সমর্থন তুলে নেয়ার ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ভুল এবং অগ্রহণযোগ্য। অস্ট্রিয়া বিশ্বাস করে যে, ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলছে।

তেহরানে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ড্যানি আন্না পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ট্রাম্পের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আমেরিকার অবৈধ ও অন্যায় আবদারের কাছে মাথা নত করবে না। ডেনমার্ক সরকার ছয় জাতিগোষ্ঠীর সাথে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার প্রতি সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখবে।’
ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে ট্রাম্পের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি বলেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতা একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি কোনো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নয়। এটা কোনো একক দেশের বিষয় নয়। কোনো একটি দেশের প্রেসিডেন্ট এককভাবে এটা থামিয়ে দিতে পারে না। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সেটা এখানে প্রযোজ্য নয়। ইরানের পরমাণু চুক্তি বাতিলের কোনো ক্ষমতা ট্রাম্পের নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ চুক্তির প্রতি তাদের সমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার করেছে এবং এটা ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি কার্যকর পারমাণবিক চুক্তি ভেঙ্গে দিতে পারে না। যেখানে একটি সমঝোতা হয়েছে, যেটি কাজ করছে, বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটাকে নস্যাত করে দেওয়ার চেষ্টাটাই হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ কাজ। আপনি অন্যকে এই বার্তাই দিচ্ছেন যে আমরা যে চুক্তি করেছি তার কোনো মূল্য নেই। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বের কাছে এই বার্তাই দিচ্ছে যে তার ওপর কোনো আস্থা রাখা যায় না। পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে ওয়াশিংটন বিশ্বে আস্থা হারাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে তার সমর্থন তুলে নিলেও ইউ এবং অন্যান্য মার্কিন মিত্রদেশগুলো এ সমঝোতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’
সূত্র-নয়া দিগন্ত 
Share on Google Plus Share on Whatsapp



0 comments:

Post a Comment