Indiapost24 Web Desk:
ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সৃষ্টির ইঙ্গিত। যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি এতদিন গোপন ছিল বা পারস্পরিক ফিসফিসানির মধ্যে ছিল সেগুলো তীব্র গতিতে সামনে আসতে থাকে। হয়তো কর্তৃপক্ষ সবই জানত কিন্তু রাজনৈতিক চাপে তাদের পক্ষে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতোনা। ঝামেলার ভয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস করেনা।
যে কোনো সরকারি দপ্তরে এক শ্রেণির কর্মচারিদের হাতে টাকা গুঁজে না দিলে 'কাজ' পাওয়া যায়না। এটা দীর্ঘদিনের পুরনো অভ্যাস। শোনা যাচ্ছে টাকা না দিলে নাকি পঞ্চায়েত থেকে শংসাপত্র পাওয়া যাচ্ছেনা। মোটামুটি এটা সবার জানা। সব জেনেও নীরব থাকে প্রশাসনের কর্তারা। ওদিকে রাজনৈতিক 'দাদা'দের ভয়ে সাধারণ মানুষ চুপ থাকে।আর এইভাবেই চলতে থাকে অনৈতিকতার রাজত্ব!
আর জি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিণতি যাইহোক না কেন রাজ্য সরকারের বেশ কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন হাসপাতালে দালাল চক্রের কথা শোনা যায়। অথচ এই চক্রকে কঠিন হস্তে ভাঙার কোনো সক্রিয় উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে সেইভাবে দেখাই যায়নি। একটু খোঁজখবর নিলেই দেখা যাবে দালাল চক্রের সঙ্গে শাসকদলের স্থানীয় নেতারা যুক্ত আছে। হাসপাতালের সুপাররা এই চক্রের কাছে অসহায়। একটি মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু কঠোরভাবে সেই চক্র ভাঙার সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন গোটা রাজ্যবাসী দেখতে চাইছে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি-পরায়ণ দালালির ঘুঘুর বাসা কে ভাঙতে সরকার কতটা সক্রিয় হতে পারে?
নির্বাচনী বণ্ডে বড় বড় ফার্মা কোম্পানির নাম সামনে এসেছে। তারা ব্যবসা করতে এসেছে। নিশ্চয়ই পরিবারের সদস্যের গহনা বিক্রি করে বণ্ড কেনেনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিয়ে এসেছে। ওষুধের দাম লাগামছাড়া হলেও সরকার নীরব থাকে। নিম্নমানের হলেও হাসপাতালের সুপাররা বাধ্য হয় তাদের ওষুধের অর্ডার দিতে। নিম্ন মধ্যবিত্ত নিরীহ রোগীদের স্বার্থে সরকার বনাম ফার্মা কোম্পানির অশুভ চক্র ভাঙার সুযোগ এসেছে।
হাসপাতালে যে রোগী কল্যাণ সমিতি আছে তাদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ ওঠে। অথচ বহাল তবিয়তে তারা থেকে যায়। কি দরকার তাদের রেখে? দ্যাখা যায় এরা শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত। পরিবর্তে প্রবীণ চিকিৎসক, সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অফিসারদের রাখা যেতেই পারে। এতে হাসপাতালের পরিষেবার উন্নতি হবেই।
অপরাধীর শাস্তির দাবিতে একটি নৃশংস খুনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলুক। পাশাপাশি সমস্ত হাসপাতাল গুলোতে যে অনাচার দুর্নীতি ও দালালি চক্র চলছে সেটা যদি বন্ধ হয় এবং বিভিন্ন প্রান্ত ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত নিম্ন মধ্যবিত্ত বা গরীব দুঃস্থ নিরীহ রোগীদের সঠিক পরিষেবা পায় তাহলে ডা. তিলোত্তমার প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হবে। বেঁচে থাকলে তিনি হয়তো সেটাই করার চেষ্টা করতেন। প্রশাসন ও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তি ও চিকিৎসকরা কি সেই চেষ্টা করতে পারেন না?রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা হলেই তাকে এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করতে দেখা গিয়েছে, সেই ভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই নিঃসন্দেহে গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল গুলিতে এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে এক অমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশাবাদী রাজ্যবাসীরা!
0 comments:
Post a Comment