হিন্দুত্বের রসায়নাগারে বিদ্ৰোহের প্রস্তুতি

Narayan Majumder:ভারতীয় জনসংঘের রাজনৈতিক ঊত্তরসূরি তথা হিন্দুত্ব রাজনীতির মুখ ভারতীয় জনতা পার্টির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক শাখা হল গুজরাট |মহত্মা গান্ধী থেকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ,মোরারজি দেশাই থেকে গুলজারি লাল নন্দের মত মানুষ গুজরাটেরই সন্তান |স্বাধীনতাউত্তর ভারতে কংগ্রেসের শক্তিশালী গড় ছিল গুজরাট |
৮০ দশকে কংগ্রেসে ভাঙ্গনের সূচনা হয় |১৯৬৯ সালে কংগ্রেস ভাগ হলেও মোরারজী দেশাইয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসের নেতারা কংগ্রেসেই থেকে যান |১৯৭৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সোসালিষ্ট পার্টি ২টি ও জনসঙ্ঘ ২ টি আসনে পায় জনতা ফ্রন্টের দৌলতে |বাকি সব আসন ই ছিল কংগ্রেসের |জরুরি অবস্থার সময় দুর্বল ছিল জনসংঘ |পরবর্তী সময়ও আদি কংগ্রেসের অনেকেই জনসংঘে ঝুঁকতে শুরু করেন |১৯৭৭ জরুরি অবস্থার অবসান ও কেন্দ্রে জনতাপার্টির সরকার গঠিত হওয়ার পর জনতা পার্টির শরিক হিসেবে গুজরাটে জনসংঘ নেতারা দ্রুত সংগঠন বাড়ানো ও রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধিতে মন দেন |৮০ দশকের শুরুতেই কংগ্রেসের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের প্রভাব বাড়তে থাকে গুজরাটে |চিমনভাই প্যাটেল ,মাধবসিং সোনাংকি ,অমরসিং চৌধুরি প্রমুখেরা কংগ্রেসের গড় রক্ষায় ঝাঁপালেও ততদিনে গুজরাটে এর তৃনমূল স্তরে আরএসএস ও জনসংঘের আধুনিক সংস্করণ বিজেপি দ্রুত প্রভাব বাড়িয়ে ফেলেছে |
৯০ এর দশকে গান্ধী প্যাটেলের গুজরাটে কেশুভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে |এইসময় বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক কারিগর হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর নাম উঠে আসে |দলের সম্পাদক নরেন্দ্র মোদীর রিমোট কন্ট্রোলে কেশুভাই সরকার চালাচ্ছেন ,এই অভিযোগে শঙ্করসিং বাঘেলা বিদ্রোহ করে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে নাস্তানুবাদ করলেও মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়তে থাকে |বিশ্বহিন্দু পরিষদ বজরং দল সংঘ পরিবার গুজরাটকে হিন্দুত্বের রসায়নাগারে পরিণত করেন |দীর্ঘ ২২ বছর গুজরাটে চলছে বিজেপির শাসন |কংগ্রেস বিরোধী দল হিসেবে কখনও প্রাসঙ্গিক শক্তি হতে পারেনি |
তবে গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনে স্নায়ুর চাপে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদি -অমিত শাহের রা |গুজরাটে বিজেপির দীৰ্ঘ শাষনে একদিকে প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনভাব বাড়ছে তেমনি পাতিদারদের সংরক্ষণ আন্দোলন ,দলিত বিদ্রোহ ,নোট বাতিল ,জিএসটি চালুর প্রভাবে বস্ত্রশিল্পে ক্ষোভের ধাক্কায় গুজরাট নির্বাচনের আগে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে যঠেষ্ট চাপে বিজেপি |শঙ্কর সিং বাঘেলা ও তার সমর্থকদের কংগ্রেস থেকে সরে আনানোর পরও গুজরাটে এর পরিস্থিতি ভালো নয় |
দলিত আদিবাসী ও মুসুলমানদের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্বের রসায়নাগারে বিদ্রোহের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কংগ্রেস | বিজেপির অভ্যন্তরেও অমিত শাহ , ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার রূপানির বিরুদ্ধে চাপা অসন্তোষকে কাজে লাগাতে চাইছে কংগ্রেস | প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল , উপমুখ্যমন্ত্রী নিতীন প্যাটেলদের অসন্তোষকে কাজে লাগাতে সক্রিয় কংগ্রেস রাজনৈতিক ম্যানেজার আহমেদ প্যাটেল | শক্তি সিং গোভিল , ভরত সিং সোলাঙ্কি ,অর্জুনভাই মেফিজোরিয়ার মত কংগ্রেস নেতারা আদিবাসী দলিত ও সংখ্যালঘু মুসলিম এলাকায় ভাল প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন | তাই গুজরাট হাতের বাইরে গেলে ২০১৯ এর নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে কংগ্রেস দ্রুত রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে মরিয়া হোয়ে ঝাঁপাবে |
অন্যদিকে গুজরাটে হারলে রাজনাথ সিং , নিতীন গড়করি , সুষমা স্বরাজেরমত নেতারা মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করবেন | মোদি জেটলিদের অর্থনীতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সংঘ পরিবারের শীর্ষ নেতৃত্ব _ গ্রাম ভারতে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হোয়েছে মোদি সরকারকে | মদির চিন্তা গুজরাটে নোট বাতিল করে , জি এস টি, দলিত প্যাটেল বিদ্রোহে জমি হারাচ্ছে বিজেপি | গ্রামীণ গুজরাটে ভাল রকম প্রভাব বাড়িয়েছে কংগ্রেস | তাই গুজরাটে জিততে নরেন্দ্রমোদি সমস্ত দল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মাঠে নামিয়েছেন | সংঘ পরিবারও বিজেপিকে জেতাতে মাঠে নেমেছে |যার ফলে স্নায়ুর চাপে পরা নরেন্দ্রমোদি , অমিত শাহ রা হিন্দুত্বের রসায়নাগারে প্রভাব অব্যাহত রাখতে বিজেপির হিন্দুত্বের মুখ যোগী আদিত্যনাথকে ও গুজরাটে আসরে নামিয়েছেন |
Share on Google Plus Share on Whatsapp



0 comments:

Post a Comment