স্নেহাশিস মুখার্জি , ৫ নভেম্বর
দীর্ঘ দিনের বাঁকুড়া জেলার বহু চর্চিত আদিবাসী ও সাঁওতালি সম্প্রদায়ের আইন অমান্য আন্দোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল বর্তমান সরকার ও অতীতের সরকারকেও.. কোনওভাবেই যেন সমাধান হচ্ছিল না,কোথাও যেন একটা সেতুবন্ধনের সমস্যা , আর রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সেই বিমুখ মনোভাবটি তিল তিল করে সঞ্চয় করে চলেছিল সাঁওতালি আদিবাসিরা ..
ফলে কথায় কথায় রাজ্য -জেলার পুলিশ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করে চলছিল বিভিন্ন অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক আন্দোলন ... আর এইভাবেই গতমাসে আন্দোলনকারী আদিবাসি সম্প্রদায়ের আইন অমান্যকারী বিভিন্ন মানুষজন ও ঘটনায় জড়িত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কম বেশি বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন ব্লকের অন্ততঃ পক্ষে ১৭ টি থানায় দায়ের হয় পথ অবরোধ , সরকারী গাড়ী ভাংচুর , আগুণ লাগানো ইত্যাদি মামলা ..
এমত অগ্নিগর্ভ অবস্থায় খাতড়া মহকুমার সারেঙ্গা থানার অন্তর্ভুক্ত নারায়ণপুর অঞ্চলে আদিবাসীদের এক বিশেষ সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর সূচনায় যখন জেলার সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু , পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও এন , খাতড়া এসডিও , খাতড়া এসডিপিও সহ বিভিন্ন নেতাদের দেখা গেল, তখনই স্পষ্টতঃ পারস্পরিক সম্পর্ক ও বন্ধনের একটা ইঙ্গিত বহন করছে ... দীর্ঘদিনের পর এই প্রথমবার আদিবাসী ও সাঁওতালিদের কোন ধর্মীয় বা সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরকার অভিমুখী ও মমতা সরকারের জনমুখী প্রকল্প গুলি তাঁদেরই মুখ থেকে উচ্চারিত হয় পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের উপরে তাঁদের হারান আস্থাও ফিরে আসে বলে তাঁদেরই বিভিন্ন পরগণা স্তরের নেতৃত্বরা জানান যা নিঃসন্দেহে এক ভীষন ইতিবাচক দিক বহন করছে এবং পাশাপাশি বিরোধী দলের রাজনৈতিক দাবা খেলার সুযোগও যে তাঁরা চিরতরে কেড়ে নিতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল |
আমাদের সংবাদ মাধ্যমকে জেলা সভাধিপতি মৃতুঞ্জয় মুর্মু জানান যে বিরোধি দলের রাজনৈতিক কুপ্ররোচনার স্বীকার হয়েছিলেন তাঁরা | এইবার সরকার অবশ্যই তাঁদের যে দাবি গুলো আছে তা যথার্থ কিনা খতিয়ে দেখবেন এবং পূরণের ব্যাবস্থা করবেন এবং ভবিষ্যতে যদি কোনওদিন তাঁদের আন্দোলনের প্রয়োজন হয় তা নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যাতে হয় সেটা তাঁদের খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে | বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও এন জানান ৫০ জনকে জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে কমপক্ষে সাঁওতালি মাঝি বাবা ও আয়ও মাঝিদের তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত এক বিশেষ ধরণের ধুতি ও শাড়ি উপহার দেওয়া হয় | তিনি আরও বলেন যে বাঁকুড়া জেলার আদিবাসি সংক্রান্ত বিভিন্ন কালচার গুলিকে বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে | এর ফলে পুলিশ ও আদিবাসি মানুষের মধ্যে যে দূরত্বের একটা বাঁধ তৈরি হয়েছিল সেটাকে মিটিয়ে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে এবং সরকার ও পুলিশ প্রশাসন তাঁদের যথার্থ দাবিগুলিকে খতিয়ে দেখবে এবং পূরণের চেষ্টা করবেন |
এইভাবে এদিনের অনুষ্ঠানের সময় স্থাণীয় এলাকার অধিকাংশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মুখে উঠে এসছে খাতড়া মহকুমার বর্তমান এসডিপিও বিবেক ভার্মার কথা | তাঁরা আমাদেরকে জানান দীর্ঘ দিন ধরে এসডিপিও বিবেক ভার্মা নাকি তাঁদের সংগে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন এবং তাঁদেরই সম্প্রদায়ের উচ্চ নেতৃত্বদের কে নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার নিজের অফিসে মিটিংও সেরেছেন | স্থানীয় এসডিপিও হিসাবে তাঁদেরকে আশ্বাস দেন রাজ্য সরকার এবং জেলা পুলিশ প্রশাসন সবসময় তাঁদের পাশে আছে,কোনোভাবেই তাঁরা যেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের কুপ্ররচণায় স্বীকার না হন | তবে এদিন এসডিপিও বিবেক ভার্মার সাঁওতালি বেশভূষা ও সাঁওতালি ভাষায় তার বক্তিতার মধ্যে দিয়ে সাঁওতালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বড় করে তুলে ধরে নিঃসন্দেহে পুলিশ প্রশাসন ও আদিবাসিদের মধ্যে কোথায় যেন দীর্ঘ দিনের ছিন্ন বন্ধন আত্মার মেলবন্ধনে পরিণত করেছে বলে মনে করছেন সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশেষজ্ঞরা ...
0 comments:
Post a Comment